২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ১১:০৫

ভালোবাসার সূর্যোদয়

আরমান জিহাদ
  • আপডেট শনিবার, নভেম্বর ৬, ২০২১,
  • 336 বার

 

সন্ধ্যায় সুখের সূর্যোদয় হওয়ার কথা,কিন্তু তা হয়নি।মুখ মলিন করে ঘরে ফিরল নাসির। কোন কথা না বলেই গামছাটা হাতে নিয়ে গোসলখানায় চলে গেল গোসল করার জন্য।
অনেক্ষণ ধরে কান্না করার পর গোসল করে ঘরে ফিরল আবার।
মিষ্টি হাসির মুখটা ভীষণ অন্ধকারে ঢাকা দেখতে পেয়ে খুশি জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে তোমার?
কিছু না!
দীর্ঘ শ্বাস পেলে জবাব দিলো নাসির।
খুশি কথা বলতে চায় কিন্তু নাসিরের মুখে কোন শব্দই যেন বেঁচে নেই আর।
খুশিকে যখন যখন পরিবার থেকে আলাদা করে নিয়ে আসে নাসির; তখন বলেছিলো খুব সুখে রাখবে। দুজনের ছোট্ট সংসার আলো দিয়ে ভরে দিবে।কই কিছুই তো হচ্ছে না।
১০ থেকে ১২ দিন ধরে চাকরির খুঁজে রাসেল এদিক সেদিক ঘুরছে কিন্তু কাজ পাওয়া বড়ই দুষ্কর এই শহরে।
করোনার এই ভয়ানক থাবা কেড়ে নিয়েছে লাখ মানুষের রুটি রুজির একমাত্র অবলম্বন চাকরিকে।
নাসির একটি চাকরি করতো কিন্তু তার চাকরিটাও সে করোনার কারণে হারিয়ে ফেলে।
খুশি খুব সুন্দর মেয়ে।কাজল কালো চোখ।খুব মায়াবী দেখতে।
একদিন যখন নাসির ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলো বিকেলের সময়, ঠিক তখনই খুশির সাথে রাস্তায় তার প্রথমবারের মত দেখা।
সাথে থাকা স্কুল বান্ধবীদের সাথে হাসিতে মত্ত ছিলো খুশি।পিছু পিছু চলতে থাকে নাসির আর হাসির যাদুতে বশীভূত হতে দেরি লাগেনি।
কেনই বা হবে না!
এত সুন্দর যার চেহারা, এত মিষ্টি যার হাসি তার প্রেমে যে কেউ বশীভূত হবে।
এভাবে কিছুদিন চলতে থাকে।নাসির খুশিকে তার নিজের করে নেওয়ার জন্য খুশির বান্ধবী চুমকির দারস্থ হয়।
চুমকি ভীষণ রাগী মেয়ে।প্রথমে যাচ্ছেতাই বকবক করতে থাকে নাসিরের সাথে।
নাসির হতভম্ব হয়ে যায়। নাসিরও সুঠাম দেহের অধিকারী। দেখতে বেশ সুন্দর।খুঁচা খুঁচা দাড়ি।
একদিন সাহস করে সরাসরি খুশির কাছে গিয়েই হাজির হয় নাসির।কষ্ট হলেও নিজের মনের কথা জানিয়ে দেয় খুশিকে।
খুশি,মুচকি হাসি হেসে চলে যায় কোন উত্তর না দিয়ে।
প্রথম যেদিন দুজনের দেখা হয়েছিল সেদিনই খুশির কাছে খুব ভালো লেগে গিয়েছিল নাসিরকে কিন্তু বলেনি কাউকে।
হয়তো নাসির এসে তাকে বলবে সেই প্রতিক্ষায় ছিলো।আজ তার মনের আরজি মনে হয় মহান প্রভু শুনতে পেয়েছে তাই নাসির তার কাছে আসলো ভালোবাসার উদাত্ত আহ্বান নিয়ে।
প্রথম যেদিন তাদের সাক্ষাৎ হয় তখনই চুমকি আর খুশি তার ব্যবহারে অনেক মন্তব্য করতে থাকে।
ওই দেখ ছেলেটা মনে হয় আমাদের ফলো করছে!
বলছিলো চুমকি।
এসব ছেলেদের এই একটা কাজ সুন্দর মেয়ে দেখলেই পিছু নেয়, নায়কের ভাব ধরে এসব বলতে বলতে হাসিতে লুটিয়ে পড়ছিলো খুশি।
কিন্তু দুজনেরই মনে মনে খুব ভালো লাগছিলো নাসিরকে।
যাক সে কথা।হাসিখুশিময় খুশির জীবনে পরিবর্তন দেখা দিল ঢের বেশি। অন্ধ প্রেমে মত্ত হয়ে গেল সে।
নাসির খুব খুশি সে পেয়ে গেছে তার মনের মত একজন রমণী। নাসিরকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি।
ওইদিকে খুশির এত খুশি দেখে কষ্টে আর হিংসায় জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে চুমকি।
এখন আর তারা একসাথে স্কুলে যায় না।কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। খুশির চেহারা দেখলে মনে হয় যেন হাজার বছরের চেনা শত্রু।
নাসির বুঝতে পারলো সেদিন চুমকি কেন এত বেশি রাগান্বিত হয়েছিল।
কিছুদিন পর জানাজানি হয়ে গেল তাদের সম্পর্কের কথা কিন্তু পরিবার মেনে নিতে রাজি নয়।
একদিন অবশ্য ঘরোয়া মিটিং হয়েছিল নাসির আর খুশির বাবা মিলন ভূইয়ার মধ্যে কিন্তু কোন ধরনের সুফল আসেনি।
খুশির নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধুই নাসিরের কথা ভাবে।
ক্লাস টেন এ পড়ে সে।করোনার কারণে এইতো সেদিন স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ, মোবাইল ব্যবহার করাও খুশির জন্য বন্ধ করে দিয়েছে খুশির বাবা।বেশ কিছুদিন হঠাৎ করেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল।
কিন্তু ভালোবাসা তো আর বাঁধ মানেনা।
নাসির ছুটে আসত সন্ধ্যায় খুশিদের বাড়িতে।দেখা করতে পারতো না তবুও আসতো।
পাশাপাশি গ্রামেই ছিলো তাদের দুজনের গ্রাম।
করোনার এই সময়ে ধীরে ধীরে অভাব বাড়তে লাগলো পরিবারে। অনেকদিন হলো নাসির বাড়িতে বসে আছে কোন কাজ কর্ম নেই। সেদিকে আবার খুশির জন্য দেওয়ানা।এসব কিছু দেখে নাসিরের বাবা আশফাক মণ্ডল মাঝে মাঝেই রাগান্বিত হয় নাসিরের সাথে। এক সময়ের পরিবারের প্রিয় ছেলেটি এখন পরিবারের সবার অপ্রিয় হয়ে উঠেছে এতদিনে।
মিলন সাহেব অবশ্য নাসিরের বাবা আশফাক মণ্ডলের কিন্তু তিনি এখনই তার ছেলেকে বিবাহ করাতে চান না।সমাজের প্রচলিত নিয়মে ছেলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সে ভয়ে। তিনি আর দশটা বাবার মতোই চিন্তা করলেন কিন্তু নিজের সন্তানের ভালোবাসা ভালো লাগার বিষয়ে উদাসীন।
এভাবেই কিছুদিন চলে গেল।একদিন হঠাৎ করে নাসির বাজারে ঘুরাঘুরির সময় ফার্মেসিতে খুশিকে দেখতে পায়।এগিয়ে গিয়ে কথা বলে।তার নিজের মোবাইলটা খুশিকে দিয়ে দেয়।লুকিয়ে লুকিয়ে কিছুদিন কথা বলে ওরা দুজনে।
ঘুম থেকে উঠে নাসিরের মা নাসিরকে যখন ডাকতে গেল তার রুমে তখন আর তাকে দেখতে পেল না।
প্রতিদিন ৭ টা থেকে ৮ বাজে যে ছেলে বিছানা ত্যাগ করে তা ও মায়ের চিল্লাচিল্লি শুনে সে ছেলে আজকে এত তাড়াতাড়ি ওঠে গেল!
ওই শুনছেন!
নাসিররের বাবাকে ডাকছে নাসিরের মা।
কি? বলো?
নাসিরকে তো দেখছি না!
আছে হয়ত কোথাও চিন্তা করো না সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে।
রাত হয়ে গেল কিন্তু নাসির এলো না।খুশির মা বাবা কান্নাকাটি করে প্রায় বেহুশ। মেয়ের পরিবার বলে কথা।
মানুষের বিভিন্ন রকমের কথা কিভাবে হজম করবে সে চিন্তা তো আরো বেশি ভেঙে দিচ্ছে তাদের।
হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠল।
ফোন ধরতেই কান্নার আওয়াজে ভেসে আসল খুশির কণ্ঠ।কিছুটা স্বস্তি পেল খুশির পরিবার।
নাসিরের পরিবারও পরে জানতে পারে যে তারা পালিয়ে বিয়ে করেছে।এখন ঢাকায় রয়েছে।
করোনায় বিপর্যস্ত এই শহরে তাদের সংসার খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছে। চাকরি মিলছে না নাসিরের। চালের দাম,তেলের দাম আর ডিমের দাম এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই অবস্থা।
তাই মলিন মুখ নিয়ে নিরবে বসে থাকে নাসির।
কি করবে কিভাবে চলবে এখন।
এখন সে একা নয় একটি ছোট পরিবার তার।
সবকিছু বুঝতে পেরে খুশি এগিয়ে আসে নাসিরের কাছে।কাঁদে হাত বুলিয়ে সাহস জোগায়। কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে  যাবে ইনশাআল্লাহ।
জর্জরিত এই দুঃসময়ের অবশেষে অবশ্য সমাধান হলো আজ।
একটা ফোন কল তার মুখে হাসি ফোটাল।কিছুদিন পূর্বে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিল সে। সিলেক্ট করা হয়েছে আগামীকাল থেকেই ডিউটিতে যোগদান করতে হবে। এসব কথাই বলেছিলেন ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি।
আরমান জিহাদ

এই পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও লেখা
Design & Developed by PAPRHI
Theme Dwonload From Ashraftech.Com
ThemesBazar-Jowfhowo