শিশুদের জন্য শৈশবকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।শিশুদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশ ঘটার জন্য সে সময়টা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশ গঠনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে বিদ্যালয়। শৈশবের সে সময়টায় তারা তৈরি করে নতুন নতুন বন্ধু। মিশতে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ও ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের সাথে। শিশুরা তখন সেখান থেকে শিখতে শুরু করে সামাজিকতা। বাক্যের আদান-প্রদান ঘটে থাকে একে অপরের সঙ্গে আর তারা যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় সে সময়টাতে। শিশুরা তাদের মনের ইচ্ছে, আকাঙ্খা প্রকাশের ভাষা শিখতে শুরু করে সে সময়টাতে। তাদের সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা, কথাবলা, চলাফেরা সবকিছুই তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্ব বহন করে। খেলার জন্য যখন বন্ধুদের সাথে মাঠে ব্যস্ত থাকে তখন তারা শিখতে পারে অনেক কিছু। তাদের মনে বিজয়ী হওয়ার একটি প্রবল ইচ্ছে তৈরি হয়। তাদের মেধার বিকাশ হয়।তারা তখন নিজে নিজে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করতে সক্ষম হয় তাদের মস্তিষ্কে।তারা কিভাবে জয়লাভ করবে তাদের খেলায়।এবং খেলতে খেলতে তারা সেগুলো কাজে লাগায়। এভাবেই তাদের মানসিক,সামাজিক বিকাশ ঘটে থাকে। বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি গড়ে ওঠে সামাজিক বন্ধন।বন্ধু বান্ধবীসহ গড়ে তোলেন একটি সার্কেল। তারা নিজেরা কিভাবে সমাজের সাথে মিশে যাবে সে শিক্ষা তারা সেখান থেকেই গ্রহণ করে থাকে ধীরে ধীরে। দুবছর হতে চললো করোনার কারণে প্রায় বন্ধ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে সকল কিছু থেকেই।
ক্লাস নেওয়া হচ্ছে অনলাইনে কিন্তু তাদের বইয়ের বাইরের যে শিক্ষা সেটা বিঘ্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
শিশুদের স্কুলের বইগুলো পড়াটাই আসল শিক্ষা নয়।আমরা তাদের সে জন্য স্কুলে পাঠাই না মূলত।
সামাজিকতা, সমাজের ভিন্নতা, চারিত্রিক ভিন্নতা, যোগাযোগের প্রক্রিয়া, ব্যবহারিক বৈচিত্র্যতা সব কিছুই একটি শিশু শিক্ষা নেয় একটি প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসার সময়টাতে। বর্তমানে শিশুরা এগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
করোনা একটি ভয়াবহ ভাইরাস এটা যেমন সত্য ঠিক এটাও ঠিক যে আমাদের শিশুদেরকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবকিছু করা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে বিভিন্ন অজুহাতে। কারণ এই সময়ে কোমলমতি শিশুরা স্কুলের মাঠে, বারান্দায় না গিয়েও স্কুলের কয়েকটি ক্লাস শেষ করে অন্য ক্লাসে চলে যাচ্ছে আর তাদের সামাজিক, মানসিক শিক্ষা অপূরণীয় থেকে যাচ্ছে। শিশুরা সেই ফাঁকে ঝুঁকে যাচ্ছে নীল দুনিয়ায়। মোবাইলের স্কিনে সারাদিন গেইমস খেলে বা বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট দেখে তাদের মহামূল্যবান সময় ব্যয় করছে। যদিও শহরের চিত্র একটু ভিন্ন হলেও গ্রামের শিশুদের ক্ষেত্রে চিত্র একদম আলাদা। শহরে শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকলেও বাবা মায়েরা শিশুদের একটু সময় দিচ্ছেন কিন্তু গ্রামের শিশুরা সেসব থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত ।
তাই শিশুদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখনি খুলে দেওয়া উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবকিছু করা সম্ভব। প্রয়োজনে শিপট অনুসারে একাডেমিক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয় বরং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে যেমন সেশন জট নামক অভিশাপের ভয় অন্যদিকে ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তার মুখে সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কাজেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরমান জিহাদ
লেখক ও ছড়াকার
কিশোরগঞ্জ