তেলে ত্যালত্যালা হয় সবাই।কোথায় থেকে শুরু করে কোথায় গিয়ে শেষ করব সেটা ভাবতে ভাবতে আমার চলে গেল কয়েক প্রহর।অতএব শুর করলাম ঘরে থেকে শেষ কোথায় গিয়ে হবে আদৌ জানি না।
পরিবারের কর্তা হলেন বাবা।বাবা যখন প্রচুর পরিমানে টাকা আয় করে আমাকে খরচ করার জন্য বিনা জিজ্ঞেসে টাকা দেন তখন বাবার প্রশংসার সীমা থাকে না।
বাবার গুণগান গাইতে গাইতে পুরো জীবন শেষ।
যখন বাবা খরচের টাকা দিতে পারেন না! তখন বাবা ভালো না।
জন্ম দিয়েছেন ঠিকি কিন্তু আহার দিতে পারেন না টাইপ কথাবার্তা শুরু হতে থাকে।
সেইম বিষয়টি আবার পুনরাবৃত্তি ঘটে যখন সন্তান বড় হয়।
পরিবারের যে সন্তান বেশি টাকা দেন খরচের জন্য সেই ছেলে সোনায় সোহাগা।
মা বাবা সারাক্ষণ সেই ছেলের কথাই জপতে থাকে সবসময়।
কিছু মা বাবা ব্যতিক্রম সেটা ভিন্ন বিষয়।তেল দিলে যখন মানুষ লাভবান হয় তখন মানুষ তেল দিবেই তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব। সব ইমাম সমান নয় কিন্তু ব্যতিক্রম খুব কমই হয়।
তারাও তেল বিলিয়ে দেন সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদককে।
বেতন সঠিক সময়ে পেতে হলে মসজিদে স্থায়িত্ব পেতে হলে কোন না কোনভাবে তেল দিতেই হবে।
এখানে কেউ দ্বিমত করতে পারেন তাই আগেই বলে রাখা ভালো আমি মসজিদ ও মাদ্রাসার সাথে মুটামুটি ছয় থেকে সাত বছর যুক্ত ছিলাম। তেল না দিতে পারলে চাকরির স্থায়িত্ব যেমন কমে তেমনিভাবে বেড়ে যায় ইমাম সাহেবের ভুল।
কোথায় যে তেল নাই সেটাই ভেবে পাই না।
হয়ত ভাবতে ভাবতে আমি পাগল হয়েই যাব।তবুও ভাবি তেল ছাড়া কী সমাজ চলে না?
সমাজের মানুষ উন্নতি করতে পারে না?
পরক্ষণেই ভাবি না বোধয় পারে না।
মানুষের সামনে হোক কিংবা পেছনে যদি একবার প্রশংসা করা যায় মানে তেল মারা যায় সে মায়ের গর্ভের ভাই বোন হয়ে যায়।
আবার ভুলগুলো ধরতে গেলে বা শুধরে দিতে গেলেই শত্রু হয়ে যায়।
তেলের কথা বলতে বলতে মনে পড়ে গেল একটি ঘটনা।
আমার বিদেশে আসার সময় টাকা লাগবে অনেক।আমি গরিব মানুষ। জমিজমা কিছুটা বিক্রি করেছি তবুও পুরো টাকা জোগাড় হয়নি।ঋণ নিতে হবে।বহু জায়গায় ঋণের জন্য ঘোরাঘুরি করেও ব্যবস্থা হচ্ছিল না।
একবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে হলো।সেই যে হলো সেটা কিভাবে হলো সেটার কথা মনে করেই হাসি।
আরে মানুষ তো তেলের পাগল।তেল দিলেই লাভ ক্ষতি নাই।
একটু তেল দেওয়ার বিনিময়ে টাকা পেয়ে যাই।
আমার যদি উপকার হয় তাহলে তেল দিলে তো সমস্যা নাই কি বলেন আপনারা?
যাই হোক, আবার ঘুরেফিরে সেই তেলের কথাই বলব।
অফিসের বসকে তেল মারে অফিসের কর্মীরা।সেই তেলটা বাধ্য হয়েই মারতে হয়।একটু তেল টেল না দিলে যদি বস রেগে যান।
রেগে গেলে যে কী হবে ন সেটা তো বুঝতেই পারছেন।
তেল যুগে যুগে ছিলো আর থাকবেও।
কুৎসিত মেয়েটাকে দেখেও যখন পরীর মতো দেখতে বলে সাবলীল আকর্ষণীয় একটি বর্ণনা বলে দেওয়া হয় তখন সেই মেয়েটা জন্মের খুশি হয়।
এই যে একটু প্রশংসার তেল ছিটা মেরে দেওয়া সেটা কিন্তু বহুলোকই করে।
কেউ যদি কাছে গিয়ে বসতে চায় মেয়েটা রাজি হবে না।কিন্তু একটু রূপের প্রশংসা করে তার হাতে হাতও আপনি রাখতে পারবেন মুহূর্তের মধ্যে।
এরকম তেল কেই বা না মারে?
স্বামী স্ত্রীর মাঝে তেলের খেলাটা আরও ব্যপক বিস্তৃত।
খাবার যেমন তেমন হোক স্ত্রীর প্রশংসা করতেই হবে।
একটু প্রশংসা করলেই দেখবেন আপনার জন্য ভালোবাসাময় আরো অনেক কিছুই রেডি।প্রত্যেক স্বামীই তেলবাজ হয়।আর তেলবাজ স্বামীদের স্ত্রীরা হয় খুশি।ঘরের অশান্তি দূর হয়।
যে সংসারগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সে সংসার গুলোতে তেলের ব্যবহার হয়।
যারা নেতা নেত্রী হতে চায় তাদের মধ্যে তেলের ব্যবহার কল্পনাতীত।
নিজের মা’কে মা বলে কয়েকদিন না ডাকলেও প্রতিদিন রাজনীতির মায়ের মুক্তি চাই, বাংলার জননী সংগঠনের মা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর দলকানা হয়ে দল যেটা করছে সেটাই ঠিক ভুল হলেও ঠিক আর ঠিক হলেও ঠিক।
এসবকে বলে তেল।আজকে ভুলের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বললেই কালকে দল থেকে বহিষ্কার।
সংসদে দাঁড়িয়ে কাজের কথা বললে সময় থাকে না।আপনার সময় শেষ বলে যেই স্পিকার থামিয়ে দেন সেই স্পিকার ত্যালে তৈলাক্ত গান শুনে সময় আরও বাড়িয়ে দেন।
তেল যারা দেয় তাদের ক্ষতি নেই।
বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে মডার্ন পৃথিবীর সাথে পাল্লা দেওয়ার মত যোগ্যতা যাদের নাই তারা দখল করে বসে আছে সংসদের অধিকাংশ আসন।
এসব তেলের কারসাজি। তেল যে যতবেশি মেরেছে সে ততোবেশি লাভবান হয়েছে।
তাই বলি তেল মারলে ক্ষতি নেই লাভ ছাড়া।
আমাদের তেল মারা উচিড তবে সব জায়গায় নয়।সময় কাল পাত্র ভেদে সবারই তেল মারতে হয়।
তেল মারুন তবে সেই তেলে মারার কারণে আপনি যে লাভবান হবেন সেটা যেন দশ ও দেশের জন্য ক্ষতি বয়ে না আনে।
প্রচুর তেল মারুন।রাতদিন তেল মারুন। তেল মেরে যদি দেশে শান্তি আনা যায় তবে তাই করুন।
তবে বাংলাদেশের সরকারের মত বোকামি করবেন না।
ভারত বাংলাদেশকে তেল মেরে পোর্ট ব্যবহার ও রাস্তা ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে নিলেও বাংলাদেশ কিন্তু সেই সুযোগ নিতে পারছে না।
এখানে তেল মারায় ভারত এক্সপার্ট হলেও বাংলাদেশ কিন্তু চরম আকারে ধরা খেয়েছে।
আর বাংলাদেশ সময়ে সময়ে ভারতকে কতোই না তেল মারে।
এই ১৫ ই আগষ্টে জাতীয় শোক দিবস আমরা পালন করি কেন করি?
বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনায় তাই নয় কি?
একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে প্রতিমন্ত্রী সাহেব অতিরিক্ত তেল মর্দন করতে গিয়ে জান্নাতকে জাহান্নামে বদলে দিয়েছেন।
তেল মারতে মারতে মানুষ আরও কত কী করে তার ইয়ত্তা নাই।
পদ্মা সেতর নিয়ে ঘটে যাওয়া সকল কর্মকাণ্ড আপনাদের সকলেরই কমবেশি জানা।
সন্তানের নাম যথাক্রমে পদ্মা সেতু ইত্যাদি ইত্যাদি রেখেছে পরিবার।
এটা কেন করেছিল?
করেছিল যেন তারা ফোকাস পায়।হ্যাঁ পেয়েছেও বটে।দেশের সর্বোচ্চ সব নিউজ মিডিয়ার হেডলাইন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে স্বর্ণের চেইন পেয়েছে।
তারপর তো শুরু হলো সেই সেইম লেভেলের তেল মারা।
তেল মারার কিচ্ছা এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। তেল নিয়ে লিখলে কয়েক জন্ম চলে যাবে কিন্তু তৈলাক্ত লেখা শেষ হবেনা।
লেখা: আরমান জিহাদ -ছড়াকার কবি ও প্রাবন্ধিক, কিশোরগঞ্জ।
তেলে তৈলাক্ত সবাই তেল ছাড়া চলেনা দুনিয়া।
রাইট।ধন্যবাদ প্রিয়।